দশদিন পূর্বে বার্ধক্যজনিত কারণে মারা যান সুরেশ চন্দ্র শীল। ডুলাহাজরা ইউনিয়নের মালুমঘাট খ্রিষ্টান হাসপাতাল লাগোয়া রিংভংস্থ হাসিনাপাড়ায় এলাকায় পরিবার পরিজন নিয়ে বসবাস করতেন। গত ২৮ জানুয়ারী সুরেশ চন্দ্র শীল মারা গেলে তার সন্তানেরা হিন্দু ধর্মের নিয়ম অনুসারে সৎকার কাজ সম্পন্ন করেন। সৎকার পরবর্তী সব নিয়ম পালন করতে শুরু করে সুরেশ চন্দ্র শীলের ছয় ছেলে ও দুই মেয়ে।
বাবা’র মৃত্যুর ১১ দিনের মাথায় সুরেশ চন্দ্র শীলের সন্তানেরা হিন্দু শাস্ত্রীয় ধর্মমতে মঙ্গলবার ভোর ৫টার দিকে আট সন্তানেরা কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে বসে সূর্য উঠার পূর্বে তাদের বাবার শ্রাদ্ধকর্ম ও আনুষ্ঠানিকতা শেষে বাড়ি ফিরছিল। তাদের মৃত বাবার শ্রাদ্ধকর্ম ও পারিবারিক পুঁজো দিয়ে ফেরার পথে কক্সবাজার মহাসড়ক পার হওয়ার সময় মালুমঘাট স্টেশনের উত্তর পাশে কক্সবাজার অভিমুখী একটি দ্রুতগামী পিকআপ গাড়ি চাপা দিলে ঘটনাস্থলে গুরুতর আহত হয় শরণ শীল, তার ভাই চম্পক শীল, নিরুপম শীল, দীপক শীল, প্লাবন শীল ও তাদের অপর তিন ভাই-বোন। পরে ঘটনাস্থল থেকে হতাহতদের উদ্বার করে স্থানীয় মেমোরিয়াল খ্রীষ্টান হাসপাতালে নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক চার জনকে মৃত ঘোষনা করেন। এ ঘটনায় গুরুতর আহত অপর দুই ভাই ও দুই বোন খ্রিষ্টান হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকলেও সকাল ১১টার দিকে আরো এক ভাইকে মৃত ঘোষণা করেন হাসপাতালের চিকিৎসক। নিহত পাঁচ ভাইয়ের লাশ আনা হয় তাদের বাড়ির উঠানে। একে একে সারিবদ্ধ ভাবে ৫ সন্তানের লাশ দেখে তাদের বিধবা মা মানু বালা শীল (৬০) শোকে পাথর ও তাদের স্ত্রী সন্তানেরা বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছে। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মৃত সুরেশ চন্দ্র শীলের বাড়িতে এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের ঘটনা। উঠানে সারি করে রাখা হয়ে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত অনুপম শীল, তার ভাই নিরুপম শীল, দীপক শীল, চম্পক শীল ও স্মরণ শীলের নিথর মরদেহ। পাশে তাদের স্ত্রী- সন্তানেরা বিলাপ করছেন। ছোট্ট ছেলে-মেয়েরা ঢুকরে ঢুকরে কাঁদছে। স্থানীয় প্রতিবেশীরা তাদের সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করছেন। হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের লোকজনের পাশাপাশি মুসলিমরাও এসেছেন নিহত ৫ ভাইকে একনজর দেখতে। সুরেশ চন্দ্র শীলের পাঁচ ছেলের একসঙ্গে এমন মৃত্যুতে হতবিহ্বল সবাই। এসবের মধ্যেই যেন ‘পাথর’ হয়ে বসে আছেন তাদের বিধবা ‘মা’ মানু বালা। কারো সাথে কোনো কথা বলছেন না, নড়াচড়াও করছেন না। তার চোখে পানি নেই। তিনি এতটাই শোকাহত যে কান্না করতেও যেন পারছেন না। পুরো পরিবার যেন শোকের মাতম। নিহত অনুপম শীলের স্ত্রী পপি শীল কান্নায় বিলাপ করতে করতে বলেন, আজকে আমার শ্বশুরের শ্রাদ্ধ হওয়ার কথা। প্যান্ডেল করা, খাবারের ব্যবস্থা, অতিথি নিমন্ত্রণ থেকে শুরু করে সব কাজ হয়ে গেছে। কিন্তু সেই শ্রাদ্ধের আগে সবকিছু নি:শেষ হয়ে গেলো। ছেলে-মেয়েরা এখন পথে বসবে।
Leave a Reply